জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে হাকালুকি হাওরে তাঁবুবাস অনুষ্ঠিত


বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচকের (সিআরআই) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গেল ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলে মারা গেছে লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। আর এর সরাসরি ফলাফল হিসেবে আবহাওয়া বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১ হাজারটি। অতিখরা, অতিবৃষ্টি, প্রলয়ঙ্করী ঝড়, তীব্র শীত, অসহনীয় তাপপ্রবাহ, করাল বন্যা ভূমিধস আমাদের জানিয়ে দেয় জলবায়ু পরিবর্তন এক কঠিন বাস্তবতা, এক মূর্তিমান চ্যালেঞ্জ।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জানুয়ারি (শুক্র শনিবার) দুদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো হাকালুকি ক্যাম্প ২০২১ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকির তীরেঅনুষ্ঠিত এই আয়োজনের আয়োজক, সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থামাছরাঙা প্রকাশন হাকালুকি হাওরের বড়লেখা অংশের ওয়াচ টাওয়ার (পাখি দর্শন কেন্দ্র, হাল্লা) এলাকায় শুক্রবার তাঁবুবাসের উদ্বোধন করেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জনাব, মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন। হাকালুকি ক্যাম্পের প্রধান সমন্বয়ক আবুল কাসেমএর সভাপতিত্বে আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক টিভি সেভেন বাংলার সিলেট প্রতিনিধি জামিদুল ইসলাম নাহিদএর সঞ্চালনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের ওপর আলোচনা করেন তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ কান্তি দাস, নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. আবুল হাসান, আলীফ সুবহান চৌধুরী সরকারি কলেজের প্রভাষক মাসুক মিয়া, মোহাম্মদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, বাহুবল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুনায়েদ আহমদ, প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাকালুকি ক্যাম্পের সমন্বয়ক রাজেশ দেব নাথ, সৌরভ চন্দ্র দাস, টিম মেম্বার চন্দন দেবনাথ। ক্যাম্পের অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বড়লেখা উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক মো. কামরুল ইসলাম।

বক্তাদের আলোচনায় হাওর বাঁচানোর নানা পরিকল্পনাসহ জলবায়ু সঙ্কট উত্তরণে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা ওঠে আসে।

রাতজুড়ে বিভিন্ন সেশনে বৈশ্বিক সঙ্কট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে ক্যাম্পে আগত অতিথিদের নিয়ে আলোচনাপর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয় সেইসাথে স্থানীয় লোকশিল্পীদের পরিবেশনায় জনসচেতনতামূলক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। অন্যান্যদের মধ্যে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সন্দীপ দাস শংকর, চ্যানেল এস স্টার অলক দেবনাথ, বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্টান ‘ইত্যাদি’ খ্যাত বাঁশি বাদক আলমগীর হোসেন।

ক্যাম্পে রাত্রিকালীন তাঁবু

হাকালুকি ক্যাম্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে টিম মেম্বার রিপন চন্দ্র দাসের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পে আগত সকলকে ক্যাম্পের লোগো সংবলিত মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়।

জানুয়ারি শনিবার সকালের নাস্তায় পরিবেশন করা হয় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চুঙ্গাপিঠা। আগত অতিথিদের নিয়ে চুঙ্গা পোড়ানো হয়। দিন হাকালুকি হাওরে বেড়াতে আসা পর্যটক স্থানীয় লোকজনের মাঝে দিনব্যাপী প্লাস্টিক সামগ্রী যত্রতত্র না ফেলা, পরিযায়ী পাখি হত্যা বন্ধে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়।

জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ক্যাম্প টিমের তৈরি প্লেকার্ড

প্রসঙ্গে হাকালুকি ক্যাম্পের সমন্বয়ক মৃণাল কান্তি দাস জানান, ‘হাওর এলাকায় আগত পর্যটকরা পানিতে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক সামগ্রী, পলিথিনের প্যাকেট ইত্যাদি ফেলে যান। যা হাওরের পরিবেশকে প্রতিনিয়ত সঙ্কটে ফেলছে। হাওরে থাকা জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। মৎস ভাণ্ডার খ্যাত হাকালুকি হাওরে  দিন দিন মাছের প্রজনন কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের নানামূখী নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতার লক্ষ্যে ২য় বারের মতো আমরা হাওর এলাকায় ক্যাম্প সম্পন্ন করেছি। লোকজনের ইতিবাচক সাড়া আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে।

সমাপনী মঞ্চ ‘হিজলতলা’য়

ক্যাম্প সংলগ্ন হাল্লা এলাকার হিজলতলায় ক্যাম্পের সাংস্কৃতিক মঞ্চে সমাপনী অনুষ্টান অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী বক্তব্যে হাকালুকি ক্যাম্পের প্রধান সমন্বয়ক আবুল কাসেম বলেন, “হাকালুকি ক্যাম্পের মধ্যদিয়ে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি। সরকার জনগণের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত করতে এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য জাতীয়মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনানামে একটি নতুন কর্মসূচি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা চাই এই কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়ন হোক। আমরা সকলেই জানি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সূচকে সপ্তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সচেতনতা সৃষ্টি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিবেশ বির্পযয় রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের এখনই সময়।”

তিনি আরও বলেন, “বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষায় প্যারিস চুক্তির কঠোর বাস্তবায়নই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির বর্তমান হারকে হ্রাস করার একমাত্র উপায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমাদের সভ্যতার ক্ষতি করছে, আমাদের গ্রহকে ধ্বংস করছে এবং আমাদের অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে অধিকাংশ দ্বীপ এবং সমুদ্র তীরবর্তী রাষ্ট্র পানির নিচে চলে যাবে। ফলে লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হয়ে পড়বে এবং এদেরকে আশ্রয় দেওয়ার সামর্থ্য বিশ্বের নেই।ধরিত্রী মাতার সঙ্গে সকলের সম্প্রীতি সুরক্ষার জন্যজলবায়ু রেজিলিয়েন্স ডেনামে একটি আন্তর্জাতিক দিবস চালুর দাবি জানাই।

মাছরাঙা প্রকাশন কর্তৃক দুদিনব্যাপী এই আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিলো যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বাংলা সংবাদ এবং টিভি সেভেন বাংলা। টি পার্টনার ছিলো টি শপ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *