বাংলা সংবাদ ডেস্কঃ সামরিক অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দলের দুই মুসলিম সদস্যকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে আটক অবস্থায় নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। রোববার ওই দুই এনএলডি সদস্যের পরিবার এই তথ্য জানায়।
এর আগে শনিবার রাতে মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বিভিন্ন স্থান থেকে এনএলডির দলীয় বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে নিরাপত্তা বাহিনী। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভ দমনের অংশ হিসেবে এই গ্রেফতারি অভিযানে এনএলডি দলীয় মুসলিম সদস্য খিন মঙ লাট ও শেইন উইনকে গ্রেফতার করা হয়।
খিন মঙ লাট ইয়াঙ্গুনের পাবেডান টাউনশিপের এবং শেইন উইন হ্লাইঙ্গ টাউনশিপের এনএলডি দলীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রোববার সকালে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের পরিবারকে দুই জনেরই মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেন, তাদের লাশ ইয়াঙ্গুনের সামরিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
মিয়ানমারে রাতভর ধরপাকড়, রাস্তায় হাজারো লোকের বিক্ষোভ
তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির কাছে শেইন উইনের পরিবারের এক সদস্য জানান, নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনাদোলুর সাথে ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘তার পুরো শরীরে রক্ত মাখা ছিল। আমরা বিশ্বাস করছি, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।’
২০২০ সালে নির্বাচনে জয়ী এনএলডি দলীয় মুসলিম পার্লামেন্ট সদস্য সিথু মঙ সামরিক হাসপাতাল থেকে খিন মঙ লাটের লাশ তার পরিবারের হাতে হস্তান্তরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘তিনি শক্তসামর্থ্য ও স্বাস্থ্যবান লোক ছিলেন যিনি নির্যাতনে মারা গেছেন।’
রোববার ইয়াঙ্গুনে জানাজার পর খিন মঙ লাটকে দাফন করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিসহ রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে। সাথে সাথে দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্কের জেরে এই অভ্যুত্থান ঘটায় সামরিক বাহিনী।
সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন শহরেই বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা অং সান সু চিসহ বন্দী রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির পাশাপাশি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন।
অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতায় দেশটিতে অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। অপরদিকে অভ্যুত্থানের পর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।