বাড়ি করতে জমি পাচ্ছেন গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি


ক্রীড়া ডেস্ক :: জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের গোল্ডেন বুট জয়ী সেরা খেলোয়াড় আঁখি খাতুন বাড়ি তৈরির জন্য জমি পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অচিরেই তার জন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর শহরের মণিরামপুর গ্রামে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের পাঁচ শতক জমি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাড়কোলা গ্রামের হতদরিদ্র তাঁত শ্রমিক ও আঁখির বাবা আক্তার হোসেন জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার মাত্র এক শতক বাড়ির জমির উপর দো-চালা একটি টিনের ঘর ছাড়া তার আর কোনো সহায় সম্বল নেই। এ ঘরেই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবলার আঁখির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার একমাত্র ভাই নাজমুল হোসেন বাবা মাকে নিয়ে এখনো এ ঘরে বসবাস করেন।

আঁখি বাড়ি আসলে বাবা-মায়ের সঙ্গে এ ঘরেই অবস্থান করেন। এটি দেখে একটি সংস্থা আঁখিকে পাকা ভবন তৈরি করে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু জমি সংকুলান না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সংস্থাটি ভবন নির্মাণ করে দিতে পারেনি। তাবে তারা আশ্বাস দেন, আঁখি জমির ব্যবস্থা করতে পারলে তারা ভবন নির্মাণ করে দেবেন। কোনো উপায় না পেয়ে মেয়ের কথা ভেবে তিনি সিরাজগঞ্জ ডিসি বরাবর জমির জন্য আবেদন করেন।

শাহজাদপুরের ইউএনও নাজমুল হুসেইন খান বলেন, ফুটবলার আঁখির পরিবারের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। তার বাবা আক্তার হোসেন ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া মাত্র এক শতক জায়গাতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তাই বাসস্থানের জায়গা চেয়ে ডিসি বরাবর তিনি আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পৌর এলাকার মনিরামপুর বাজার এলাকায় প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ৫ শতক জমি আঁখির জন্য নির্ধারণ করেছি।

শাহজাদপুর উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিন আকন্দ এ খাসজমিটি দখল করে রেখেছিল। আমরা এরইমধ্যেই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই জমি দখলমুক্ত করেছি। ভূমি মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে এটি অনুমোদন হয়ে আসলে তাকে এ জমি আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

নাজমুল হুসেইন খান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্রীড়াবান্ধব ব্যক্তি। তিনি কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার মেহেদী মিরাজকে বাড়ি করার জন্য জায়গা দিয়েছেন। ফলে আমরাও আশান্বিত যে, খুব দ্রুত আঁখি এ জমিটি বরাদ্দ পাবে।

অতিরিক্ত ডিসি (রাজস্ব) ইফতেখার উদ্দিন শামীম বলেন, গত ১১ এপ্রিল ফুটবলার আঁখির একটি আবেদন আমরা পেয়েছি। জমি পাওয়ার অধিকার তার আছে। সবেমাত্র আবেদন করেছে, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে জমি আছে, দেয়া যাবে।

আঁখির বড় ভাই নাজমুল হোসেন বলেন, খুবই কষ্ট করে লেখাপড়া করছি। বাড়িতে থাকার মাত্র একটি ঘর। সেখানেই খুব কষ্ট করে মা বাবা থাকে। আমি থাকি এক চাচার ঘরে। আঁখি বাড়ি এলে মায়ের সঙ্গে খুব কষ্ট করে  ঘুমায়। তার সাফল্যে আমি গর্বিত। সে শুধু আমার নয় পুরো শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জবাসীর গর্ব। তাই সে বাড়ি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত।

২০১৪ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবলে শাহজাদপুর ইব্রাহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে খেলে উঠে আসে আঁখি। ২০১৫ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক আসে তার। এর আগে তাজিকিস্তানে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ আঞ্চলিক ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম খেলে আঁখি। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্টে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে আঁখি খাতুন গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন।