চোখে জলে বার্সেলোনা ছাড়লেন মেসি, আবারও বিজয়ীর বেশে হাজির হওয়ার প্রত্যয়


যেন আবেগ আর স্মৃতির এক ঝড় বয়ে গেল তার ওপর দিয়ে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে যে আঙিনায় পা পড়েছিল, দিনে দিনে গড়ে উঠেছিল অটুট বন্ধন, সেটার ছেদ পড়ে গেছে। বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা সারতে সংবাদ সম্মেলনে এসে তাই আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না লিওনেল মেসি।

কথা বলার শুরু থেকেই ছলছল করছিল চোখ। ধরে আসছিল গলা। ছোট্ট বিদায়ী বক্তৃতার শেষে আর ধরে রাখতে পারেননি নিজেকে, চোখ বেয়ে নামে জলের ধারা। উপস্থিত সবাই তখন দাঁড়িয়ে, চেয়ারে বসা কেবল মেসির তিন ছেলে। তারা হয়তো ঠিক মতো বুঝতেও পারেননি ঠিক কী হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়. বার্সেলোনার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে ‘ফ্রি এজেন্ট’ হয়ে যান মেসি। তবে অনেকের প্রত্যাশা ছিল ৩৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড থেকে যাবেন কাম্প নউয়ে। লম্বা সময় ধরে চলা আলোচনার শেষও হয়েছিল চাওয়া পূরণের ইঙ্গিত দিয়ে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বার্সেলোনা জানিয়ে দেয়, লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়মের বাধার কারণে মেসির সঙ্গে চুক্তি করা সম্ভব নয়।

কত রেকর্ড গড়েছেন, উপহার দিয়েছেন কত জাদুকরী মুহূর্ত। সেই সবই এখন অতীত। চোখে জল, বুকে ব্যথা নিয়ে ছাড়ছেন প্রিয় কাম্প নউ। নজর এখন নতুন চ্যালেঞ্জে। আবারও বিজয়ীর বেশে হাজির হওয়ার প্রত্যয় লিওনেল মেসির কণ্ঠে। আর বার্সেলোনাকে নিয়ে আশা, তাকে ছাড়াও ঠিক এগিয়ে যাবে তার প্রিয় দল।

স্প্যানিশ ক্লাবটির সঙ্গে নতুন চুক্তির দুয়ারে ছিলেন মেসি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বার্সেলোনা জানিয়ে দেয়, লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়মের বাধার জন্য এই চুক্তি সম্ভব নয়। বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসে মেসি জানালেন, প্রিয় ক্লাব ছাড়ার অর্থ কী এখনও যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

“এই জায়গা, এই ক্লাব যেখানে আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে সেটা ছেড়ে যাওয়ার অর্থ আজও আমি বুঝতে পারছি না। প্রথম স্কোয়াডে ছিলাম ১৬ বছর। এখন আবার আমাকে নতুন করে শুরু করতে হবে।”

“আমার পরিবারের জন্য এটা হবে কঠিন এক পরিবর্তন। কারণ, আমি জানি এই শহরে তারা কেমন অনুভব করে। কিন্তু আমি জানি, আমরা মানিতে নিতে পারব এবং ভালো থাকব। আমাদের এটা মেনে নিতে হবে এবং মানিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে।”

কিছু দিন আগেও জীবনের সেরা সময় কাটাচ্ছিলেন মেসি। কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে দেশের হয়ে জিতেছিলেন প্রথম বড় কোনো শিরোপা। এরপর ছুটি কাটিয়ে বার্সেলোনায় ফিরেছিলেন নতুন চুক্তির লক্ষ্য নিয়ে।

কিন্তু নানা সমস্যায় সেই চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। মেসির জন্য এটা ছিল সবচেয়ে বড় আঘাত।

“এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত। অনেক কঠিন সময়, পরাজয় এসেছে, কিন্তু এটা আর কখনও ফিরবে না। এই ক্লাবে এটাই শেষ, অন্য কোথায় নতুন গল্পের শুরু।”

“ব্যথা, অনেক বেশি ব্যথা। কারণ, আমি আমার ভালোবাসার ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছি। এমনটা প্রত্যাশা করিনি। আমি সব সময়ই সত্যিটা বলেছি। গত বছর আমি ছাড়তে চেয়েছিলাম, এই বছর নয়। ব্যথাটা এ কারণেই।”

কোনো কিছুই থেমে থাকবে না, ভালো করেই জানেন মেসি। নিজে শুরু করবেন নতুন কোথাও। নিজেদের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়কে ছাড়াই এগিয়ে যাবে বার্সেলোনা।

“বার্সেলোনায় খেলোয়াড়দের আসা অব্যাহত থাকবে। যে কারোর চেয়ে ক্লাব বড়। মানুষ একটা সময় অভ্যস্ত হয়ে যাবে। প্রথম দিকে এটা অদ্ভূত লাগবে। গ্রেট ফুটবলাররা আসবে আর তাদের গ্রেট একটা স্কোয়াড আছে।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *