বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনে দলীয় নেতাদের ভূমিকা প্রকাশ করতে চান বর্তমান আ.লীগ নেতারা


আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মনে করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা জাতির সামনে তুলে ধরা দলের দায়িত্ব।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা বলেছেন, ওই সময়ে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের ব্যর্থতা তুলে ধরা বিব্রতকর হলেও তা আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রজন্মের নেতাকর্মীদের জানা দরকার।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর রক্ষীবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নীরবতা পালন করেছেন। অথচ তাঁদের ওপর ভরসা করে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন। তাঁদের এই নিষ্ক্রিয়তা বাংলাদেশ ও আওয়ামী লীগকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ওই ব্যর্থতা ও দায় নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে তেমন কোনো আলোচনা এত দিন হয়নি। এখন এই আলোচনা প্রকাশ্যে করা হবে। জাতির সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। এটি ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের পথচলার জন্য সহায়ক হবে।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এক আলোচনাসভায় দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা দলের প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাক, বর্তমান উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময়ের সেনাপ্রধান ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কে এম সফিউল্লাহর নাম ধরে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

সম্প্রতি দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এক গণমাধ্যমকে বলেন, “কবিগুরু বলেছেন—সত্যরে লও সহজে। তিনি আরো বলেছেন—সত্য যে কঠিন/কঠিনেরে ভালবাসিলাম। বেশির ভাগ সময়ই সত্য তিক্ত হয়। কিন্তু এ জন্য তো আর সত্য গোপন করা যাবে না। সত্য যেটা সেটা সত্যই। এটা চাইলেও গোপন করা যায় না অথবা টেনে বড় করা যায় না। বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁর বেদনার কথা বৃহস্পতিবারের আলোচনাসভায় তুলে ধরেছেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “ইতিহাসের সত্য ঘটনাকে মেনে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এতগুলো লোক মোশতাকের মন্ত্রিসভায় গেল! এরা ভয়ে গেছে, নাকি লোভে গেছে, সেটা জানার অধিকার জাতির আছে, আওয়ামী লীগের এই প্রজন্মের নেতাকর্মীদের আছে। আমাদের নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল, তা সামনে আনা দরকার। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের হাতের রান্না যাঁরা বেশি খেয়েছেন, তাঁরাই আবার বেঈমানি করেছেন। ইতিহাসে এঁদের ভূমিকা পরিষ্কার হওয়া দরকার।”

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে যে ভোরে হত্যা করা হলো, সেদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ছিল। ছাত্রলীগের ব্যাপক জমায়েতের প্রস্তুতি ছিল। কোনো দায়িত্বশীল নেতা যদি সেদিন প্রতিরোধের ডাক দিতেন, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় মিছিলের ঢল নেমে যেত। এই মিছিল ৩২ নম্বরের দিকে এগোলে বিপথগামী সেনারা ভয়ে পালাত। হয়তো বঙ্গবন্ধুকে বাঁচানো যেত না, কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ বেঁচে যেত।”


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *