মিশিগানে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত


ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে উদযাপিত হয়ে গেল হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব, শারদীয় দুর্গা পূজা।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে গত বছর শুধু নিয়ম রক্ষা করার জন্য পূজা করা হয়। গত বছরের পূজায় কোন জনসমাগম এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না হওয়ায় এবার প্রতিটি পূজায়ই লোক সমাগম হয়েছে বেশী। আর আবহাওয়া ভাল থাকায় এবার মিশিগানের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকেও অনেকে পূজা দেখতে এখানে এসেছিলেন।

এবার গত ৯ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিন ব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ও মন্দির পূজা উদযাপন করে। এবারে পূজায় ছিল বিভিন্ন বিচিত্রতা। প্রবাসের পূজা মানে সবার মিলিত এক মহোৎসব।অনেকেই বছরের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করেন, যেখানে দেখা হবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিটি পূজায় ছিল মায়ের বোধন, নব পত্রিকা স্থাপন আরাধনা, পূজা, অঞ্জলি, প্রদীপ প্রজ্বালন, আরতি, সন্ধি পূজা, চণ্ডীপাঠ, প্রসাদ বিতরণ, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। বিদেশ বিভুঁইয়ে শারদোৎসব মানে সামাজিকতা ও আধ্যাত্মিক তার মহামিলনের এক শিল্পিত রূপ। দেশের শিউলি ফুল, কাশবন, হ্যাজাক বাতি, মাইকের আওয়াজ হয়তো এখানে নেই, কিন্তু উৎসবের যে আনন্দ তার কোনো কমতি নেই এখানেও।

দুর্গা মন্দির: ডেট্রয়েট শহরের দুর্গা মন্দিরে গত ১১ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ৭ দিন ব্যাপী দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিনই পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, আরতি, ধুনুচি নৃত্যসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদি  হয়েছে। ১৩ অক্টোবর মহা অষ্টমীর দিন ১০৮ টি সদ্যফোটা পদ্মফুল ও ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধিপূজা করা হয়। মন্দিরে বিশেষ আলোকসজ্জা করা হয়। ১৬ অক্টোবর বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা অবধি ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। এতে স্থানীয় শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন।রম্য শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেন ডলি দেব ও পার্থ দেব।

নিউইয়র্ক থেকে আগত অতিথি শিল্পী শান্তনীল ও কৃষ্ণা তীথির সঙ্গীতের মুর্চ্ছনায়  মুগ্ধ হন সবাই। সবশেষে ছিল ধামাইল। এতে নারী পুরুষ সবাই অংশগ্রহণ করেন। ধামাইলের সুর ও নাচ কিছু সময়ের জন্য হলেও সবাইকে মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা দেশের স্মুতি বিজড়িত দুর্গোৎসবের দিনগুলোর কথা। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুদের উপর হামলা, দুর্গা প্রতিমাসহ মন্দির, ঘরবাড়ী, দোকানপাট ভাংচুর, অগ্নিকান্ড ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদে এক মিনিট আলো নিভিয়ে প্রতিবাদ জানান দুর্গা মন্দিরের ভক্তবৃন্দরা।

১৭ অক্টোবরের সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে ছিল কবিতা আবৃতি, সঙ্গীত, নৃত্য, লাঠিখেলা ও নাটক “হিরন্যকশিপু বধ”। প্রতি বছরের মতো এবারো মন্দির থেকে বহুবর্ণা স্মরণিকা “শারদ অর্ঘ্য” প্রকাশিত হয়েছে। এতে ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কের কবি, সাহিত্যিকেরা প্রবন্ধ ও কবিতা লিখেছেন। যা পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছে।এদিন আবারো মন্দিরের ভক্তরা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর হামলা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন।

শিবমন্দির: ওয়ারেন সিটিতে সদ্য মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটাই তাদের প্রথম দুর্গা পূজা। স্বল্প সময়ের প্রস্তুতিতে সুন্দর একটি পূজা তারা উপহার দিয়েছেন মিশিগানবাসীকে। ৯ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মন্দিরটি দুর্গা পূজা উদযাপন করেছে। প্রতিদিনই ছিল পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিচিত্রা: বেভারলি হিলস শহরের গ্রোভস হাইস্কুলে ৮, ৯ ও ১০ অক্টোবর তিন দিনব্যাপী বিচিত্রা এবার দুর্গোৎসব করেছে। এতে ছিল পূজা, অঞ্জলি, চন্ডীপাঠ, শিশুদের জন্য ম্যাজিক শো, গান, নৃত্য, শ্রুতি নাটক, ফ্যাশন শো, প্রসাদ, ধুনুচি নাচ, সিঁদুর খেলা।

বিচিত্রা ইনক: বিচিত্রা ইনক এবার দুর্গা পূজা করেছে একদিন। ৯ অক্টোবর ওয়ারেন সিটির কালীবাড়ীতে তাদের পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছিল মায়ের পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ।

কালীবাড়ী: ওয়ারেন সিটিতে অবস্থিত কালীবাড়ীতে পূজা অনুষ্টিত হয় ১১ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাত দিনব্যাপী। এতে ছিল পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, আরতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *