তীর্থ ভ্রমণ পরিণত হয় আনন্দ উৎসবে


ভ্রমণ বিমুখ বলে বাঙ্গালির একটা বদনাম ছিল। সঞ্জীব চট্রোপাধ্যায় তার ভ্রমণ কাহিনী ‘পালামৌ’তে খুব সুন্দর করে তা তুলে ধরেছেন। রবীন্দ্রনাথ তার ‘মানসী’ কাব্যের ‘দুরন্ত আশা’ কবিতায় বাঙ্গালির ভ্রমণ বিমুখতার কথা বলেছেন। কিন্তু দিন পাল্টাচ্ছে, বাঙ্গালি এখন প্রচুর ভ্রমণ করে। বিশেষ করে ধর্মভীরু বাঙ্গালি সুপ্রাচীন কাল থেকেই তীর্থ ভ্রমণ বিলাসী। তাই রবীন্দ্রনাথই আবার বলেছেন, পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দুধারে আমার দেবালয়।  কবি তার জীবনে দেশ বিদেশ প্রচুর ভ্রমণ করেছেন, ভ্রমণ থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে গেছেন ভ্রমণ সাহিত্য আমাদের জন্য। তীর্থ যাত্রা নিয়ে লিখেছেন প্রবোধ কুমার স্যানাল, সমরেশ বসুসহ অনেকে।

ঠিক তেমনি এক তীর্থ ভ্রমণের আয়োজন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরে অবস্থিত দুর্গা টেম্পলের নির্বাহী কমিটি। জানা গেছে, গত ২৮ ও ২৯মে দুদিনব্যাপী একাধিক অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন মন্দির দর্শন করেন ভক্তমন্ডলী। মন্দিরের সভাপতি পংকজ দাশ জানান, ১১৬ জন ভক্ত নিয়ে দুটি বিলাসবহুল বাসে করে তারা ২৮ মে শনিবার সকালে দুর্গা মন্দির থেকে যাত্রা করেন, এরপর তারা গ্রেটার ক্লিভল্যান্ড শিব বিষ্ণু মন্দির, শ্রী ভেঙ্কেটস্বর বালাজী টেম্পল, শ্রী স্বামী নারায়ণ হিন্দু টেম্পল, জৈন সোসাইটি অব গ্রেটার ক্লিভল্যান্ড(জৈন মন্দির) দর্শন করেন। দুপুরে একটি মন্দিরে সবাই প্রসাদ গ্রহণ করেন। সন্ধ্যার পর সবাই একটি হোটেলে ওঠেন। হোটেলের অনুষ্ঠান কক্ষে সবাই গান, বাজনা,

খেলাধূলা,আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। তীর্থ ভ্রমণ পরিণত হয় আনন্দ উৎসবে। রাতের খাবারের পর ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন রোববার সকালে প্রাতরাশের পর সবাই ‘ব্রিডাল ভেইল ফলসে’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।  বাসের মধ্যে ভক্তরা গান, বাজনা, কবিতা আবৃতি, কৌতুক পরিবেশন করে আনন্দ উপভোগ করেন।  ব্রিডাল ভেইল ফলসে পৌঁছানোর পর দেখা মেলে সবুজের চাদরে ঢাকা প্রকৃতি।  নাম না জানা রংবেরংয়ের পাহাড়ী ফুল ফুটে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। পাহাড়ের ভিতর  দিয়ে চলে গেছে আঁকাবাঁকা পথ। পাহাড়ী ঝর্না দেখে অনেকেই একটু আবেগাপ্লুত হন। ঝর্ণা বয়ে যাওয়ার শব্দ, পাখীদের সশব্দ পদচারণা,  কেমন যেন একটু নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসে অনেককে।

ঘন্টা দুয়েক কাটার পর  সেখান থেকে বালাজী মন্দিরে গিয়ে সবাই  দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে ব্যাপস স্বামী নারায়ণ মন্দিরে যান। সেখান থেকে তারা ডেট্রয়েটের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ বিকেলে সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ছে তখন তীর্থ ভ্রমণের যাত্রীরা ডেট্রয়েট দুর্গা মন্দিরে ফিরে আসেন।

মন্দিরে এসে গীতাপাঠের মাধ্যমে তীর্থভ্রমণের ইতি টানা হয়। ভক্তদের পক্ষ থেকে মন্দিরের সভাপতি পংকজ দাশ, সহসভাপতি নৃপেশ সুত্রধর ও সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সুত্রধরকে এরকম একটি তীর্থ ভ্রমণের আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান।

আরো পড়ুন

ডেট্রয়েট দুর্গা টেম্পলের আয়োজনে তীর্থ ভ্রমণ


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *