মজুরি নেই, ঘরে খাবার নেই


ডেস্ক রিপোর্ট :: ১১ সপ্তাহের মজুরি নেই। মজুরি কমিশন তো দূরের কথা নিয়মিত মজুরির পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থসংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পেটে ভাত নেই। শ্রমিক দিবস যাদের জন্য সেই শ্রমিকেরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বলছিলেন খুলনার প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নাছির উদ্দিন।তার মতো আরো একজন আছেন। তিনি মুরাদ হোসেন। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিকলীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক। মুরাদ বলেন, বেতন নেই, মজুরি নেই, ঘরে খাবার নেই। কিসের মে দিবস। শ্রমিকের মনে শান্তি নেই। পরিবার পরিজনের মুখে আহার দিতে পারছে না। দিশেহারা হয়ে পড়েছে।বছরের অধিকাংশ সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায়ে রাজপথে আন্দোলনে ব্যস্ত থাকছেন। তারপরও তারা তাদের পুরো দাবি আদায় করতে পারছেন না। মিল কর্তৃপক্ষ বলছে, আর্থিক সমস্যার কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মিলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় এ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।খুলনা অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি জুট মিল রয়েছে প্রায় ৩৫টি। এরমধ্যে বেসরকারি ২৫/২৬টি আর সরকারি ৯টি। এছাড়া রয়েছে হার্ডবোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, দাদাম্যাচ ফ্যাক্টরি, মাছ কোম্পানিসহ বিভিন্ন ছোট বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ও হার্ডবোর্ড মিল। খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল চালু হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয়নি। বেসরকারি স্পেশালাইজড, এ্যাজাক্স, জুট স্পিনার্স, মহসেন জুট মিল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। সম্প্রতি আফিল জুট মিল ও সোনালী জুট বন্ধ হয়েছে। আর নওয়াপাড়া মিলের বিভিন্ন ইউনিট বন্ধ রয়েছে।রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা। শ্রমিকদের মজুরি কমিশন কার্যকর সংক্রান্ত দাবির সঙ্গে একমত বিজেএমসি এবং পাটকলের কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। সে কারণে সময়মতো মজুরি দিতে পারছেন না তারা। ৯টি পাটকলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন।বেসরকারি পাট, বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, মে দিবস শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু খুলনা অঞ্চলের শ্রমিকরা আজ ভালো নেই। নিয়মিত বেতন পাচ্ছে না। মিলগুলোতে শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা মিলগুলো চালু করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না মালিকরা। এ অবস্থায় শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।বেসরকারি পাট, বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ আনছার উদ্দিন বলেন, বেসরকারি অধিকাংশ মিল এখন বন্ধ। আর যে মিলগুলো চালু রয়েছে তার অনেক ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবসে আজ তারা অবহেলিত ও বঞ্চনায় রয়েছে।