আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: শ্রীলংকায় ভয়াবহ সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত ৯ আত্মঘাতী হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছে শ্রীলংকা।
বুধবার লংকান পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা তাদের নাম প্রকাশ করেন। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় হামলাকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে বলেও জানান তিনি।
গেল ২১ এপ্রিল (রোববার) খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলংকার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা এবং তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে সিরিজ বোমা হামলায় অন্তত ২৫৩ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। – খবর দ্য গার্ডিয়ান
সেদিন তিনটি বিলাসবহুল হোটেল ও তিনটি গির্জাসহ আরো দুইটি স্থানে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সবকটি স্থানে একজন করে আত্মঘাতী পাঠানো হলেও ব্যতিক্রম ছিল সাংগ্রি লা হোটেল। সেখানে পাঠানো হয়েছিল দু’জনকে।
সাংরি লা হোটেলের হামলাকারীদের একজন হলেন জাহরান হাসিম ও অন্যজন ইলহাম আহমেদ।
হাসিম হলেন এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও আইএস সংশ্লিষ্ট স্থানীয় জঙ্গি গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতের নেতা। ওই হামলার জন্য দেশটির সরকার তাওহীদ জামাতকে দায়ী করে আসছে। আইএস-এর পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, বাগদাদির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে হাশিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই হামলা হয়েছে। সম্প্রতি তাওহীদ জামাতসহ দুটি ইসলামিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে শ্রীলংকা।
পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা জানান, শ্রীলংকার খুবই ধনী এক পরিবারের দুই সন্তান দুইটি বিলাসবহুল হোটেলে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছে। বনেদি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এ পরিবারটি কলম্বোর মসলা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে।
ইলহামের বড় ভাই ইনসাফ আহমেদ চালায় চিনামোন গ্র্যান্ড হোটেলে। হামলার তৃতীয় স্থান ছিল কিংসবারি হোটেল। সেখানে হামলা চালিয়েছে মোহাম্মদ আজম মুবারক মোহাম্মদ। তার স্ত্রী এখন পুলিশের হেফাজতে আছেন।
সেন্ট অ্যান্থনি গির্জায় হামলা চালিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ মুয়াজ। তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরদিকে সেন্ট সেবাসতিয়ান গির্জায় হামলা চালিয়েছে মোহাম্মদ হাসথুন। তিনি পূর্ব উপকূলের বাসিন্দা। হাশিমও ওই এলাকার বাসিন্দা। পূর্বাঞ্চলীয় বাতিকালোয়া জেলার ক্রিশ্চিয়ান জাইওন গির্জায় হামলা চালিয়েছে মোহাম্মদ নাসের মোহাম্মদ আসাদ।
অপর এক ব্যক্তি আরো একটি বিলাসবহুল হোটেলে হামলার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তবে সে তার সঙ্গে থাকা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটায় রাজধানীর কাছে অবস্থিত একটি গেস্ট হাউসে। ওই ব্যক্তির নাম আবদুল লতিফ। তিনি ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে পড়াশুনা করে শ্রীলংকায় বসবাস করছিলেন।
সাংরি লা হোটেলের হামলাকারি ইলহাম আহমেদের স্ত্রী ফাতিমা ইলহামও অপর একটি স্থানে হামলা চালান। তিনি তার সঙ্গে থাকা বিস্ফোরকে বিস্ফোরণ ঘটালে তার দুই সন্তান এবং তিন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়।
শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা মনে করছেন, ২১ এপ্রিলের ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণের নেপথ্যে কোনো বিদেশি সূত্র রয়েছে। বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, বিদেশি কেউ হামলার পরিকল্পনা করে থাকতে পারে।
তিনি বলেন, শ্রীলংকান নাগরিকদের ‘ছোট একটি দলের’ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছে যে, তারা গেল ১০ বছর ধরে আইএস-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ ভ্রমণ করেছে। জব্দ করা বিস্ফোরক ও ডিভাইসগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা গেছে, হামলায় ব্যবহৃত বোমাগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি করা।