ডেস্ক রিপোর্ট :: রমজানের মর্যাদা অন্য সব মাসের চেয়ে বেশি। এ মাসে আল্লাহ তাআলা মানুষের সর্বোত্তম জীবন ব্যবস্থা পবিত্র কুরআনুল কারিম দান করেছেন। যাতে মানুষ এ কুরআনের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে পারে। আর কুরআনের শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম প্রশিক্ষণ মাস হলো রমজান।
এ মাসে রোজাদারের জন্য অনেক কাজ থেকে বিরত থাকা থাকার নির্দেশনা রয়েছে। আবার এমন কিছু আমল বা কাজ আছে যা পরিমাণে কিংবা সময়ে অল্প হলেও তা করা অত্যন্ত জরুরি। আর তাহলো-
>> কুরআন তেলাওয়াত
অল্প সময় কিংবা অল্প পরিমাণে হলেও পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা। কুরআন তেলাওয়াতের সময় অবশ্যই তা বিশুদ্ধভাবে তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করা। যেটুকু পরিমাণ তেলাওয়াত করবেন তার অর্থ ও ব্যাখ্যা জেনে নেয়াও উত্তম। তাফসির পড়তে অপরাগ হলে অন্তত দেখে দেখে তেলাওয়াত করা।
>> তারাবিহর তেলাওয়াত
যারা খতম তারাবিহ পড়েন, তাদের জন্য প্রতিদিনের কুরআন তেলাওয়াতের নির্ধারিত অংশ দেখে নেয়া।
>> জামাআতে নামাজ পড়া
প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। যদিও সবসময়ই জামাআতে নামাজ আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় রমজানে মানুষের মাঝে জামাআতে নামাজ পড়ার চেতনা উজ্জীবিত হয়। তাই এ সময়টিতে জামাআতে নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া।
>> তারাবিহ পড়া
তারাবিহ নামাজ নিয়মিত আদায় করা। এ নামাজের প্রসঙ্গে রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতের (তারাবিহ) নামাজ পড়বে, তার আগের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ এ হাদিস থেকেই তারাবিহ নামাজের গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
>> রাত জেগে ইবাদত
তারাবিহ নামাজ যদিও গভীর রাতের লম্বা ক্বেরাতের ইবাদত। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে গভীর রাতে কিংবা দীর্ঘ সময়ে আদায় করা হয় না। তাই একাকি হলেও রমজানজুড়ে রাত জাগরণ করে জিকির-আজকার, নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত ও তাওবা-ইসতেগফারে রাত অতিবাহিত করা।
>> কম ঘুমানোর চেষ্টা করা
রমজানের ফজিলত লাভে রমজান জুড়ে কম ঘুমানোর চেষ্টা করা। আর রমজানের অন্যতম ৩টি শিক্ষার একটি হলো কম ঘুম। বছরব্যাপী এ অভ্যাস তৈরিতে রমজানের বিকল্প নেই। তাই রমজানের সময়কে কাজে লাগানোর পাশাপাশি এ মাসে কম ঘুমানোর বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা।
>> ইফতার করানো
প্রতিদিন সাধ্য মোতাবেক কাউকে ইফতার করানো। রমজানে অন্যকে ইফতার করানোর ফজিলত ও সাওয়াব অনেক বেশি। হাদিসে এসেছে-
হজরত যায়েদ ইবনে জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাল, তারও রোজাদারের ন্যায় সাওয়াব হবে; তবে (এ কারণে) রোজাদারের সাওয়াব বা নেকি বিন্দুমাত্র কমানো হবে না। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)
রোজাদারকে ইফতার করালে তার প্রতিদান আল্লাহ তাআলা নিজের পক্ষ থেকে প্রদান করবেন, রোজাদারের পক্ষ থেকে নয়। এ কারণেই রোজাদারের কোনো নেকি হ্রাস করা হবে না। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ।
সুতরাং সামান্য পানি বা খাবার দিয়ে হলেও অন্যকে ইফতারে শরিক করা। অসহায়, গরিব, মুসাফির, আলিম, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-পড়শিদের মধ্য থেকে কাউকে না কাউকে নিয়মিত ইফতার করানোর চেষ্টা করা।
>> নারীদের কাজে সহযোগিতা করা
রমজানের রোজা নারী-পুরুষ সবার জন্যই ফরজ। তাই ঘরের রান্নাবান্নার কাজে নারীদের সহযোগিতা করা। আর এটি প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতও বটে। বছরের অন্যান্য সময় না পারলেও অন্তত রমজানে যতটুকু সম্ভব নারীদের কাজে সহযোগিতা করা।
>> সাহরির সময় প্রতিবেশিকে জাগিয়ে দেয়া
রমজানে রাত জেগে ইবাদতের কারণে অনেকে ঘুম থেকে সাহরি খেতে ওঠতে পারে না। তাই আগে ওঠলে সাহরির সময় বাড়ির লোকদের কিংবা প্রতিবেশিদের জাগিয়ে দেয়া। যাতে তারাও সাহরি গ্রহণ করে বরকত লাভ করতে পারে।
>> মন্দ ত্যাগ করে ভালো অভ্যাস গঠন করা
রমজান মাস ব্যাপী অন্যকে গালিগালাজ কিংবা সমালাচনা বন্ধ করে দেয়া। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে দূরে থাকা। অধীনস্ত কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী, সন্তান-সন্ততি কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের প্রতি সদয় হওয়া। নিজেদের মধ্যে ক্ষমার অভ্যাস গড়ে তোলা।
>> গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা
রমজানের নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে সব ধরনের গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। যারা কবিরা গোনাহে অভ্যস্ত কিংবা যে কোনো গোনাহে অভ্যস্ত তারা সব ধরনের গোনাহ থেকে নিজেদের বিরত রাখা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত কাজগুলোর ব্যাপারে রমজান মাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বছরজুড়ে তা আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।