বি চৌধুরীর যুক্তফ্রন্টে অস্থিরতা


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নানা ইস্যুতে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শরিক দলগুলো।

এছাড়া তারা কি সরকারের অংশ না বিরোধী দলে, তা পরিষ্কার করতে জোটের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। শুক্রবার জোটের এক যৌথ সভায় এ নিয়ে কথাও বলেন শরিকরা। শিগগিরই এসবের স্পষ্ট জবাবসহ জোটকে সক্রিয় করা না হলে বাংলাদেশ ন্যাপ ও কয়েকটি দল যুক্তফ্রন্ট ছাড়তে পারে।

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। শুধু সরকারের তোষামোদ করার রাজনীতি না। গত ৬ মাসে সরকারের নানা ভুল ও দুর্নীতি নিয়ে দলগতভাবে আমরা কথা বললেও জোটগতভাবে কিছুই করিনি।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুর্নীতি, কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, পাট শ্রমিকদের মজুরি, নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে- এসব ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা কী? জনগণের পক্ষে কর্মসূচি নির্ধারণে ব্যর্থ হলে সে জোটের প্রয়োজনীয়তা থাকে না। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের অবস্থানটা কোথায়? এটা অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে। নইলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্টের প্রধান সমন্বয়ক বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন যুগান্তরকে বলেন, শরিকদের মধ্যে ক্ষোভ নেই। আমরা কী পেলাম- এসব আর কী। মহাজোটের যে বিশাল বিজয়, এটাই তো আমাদের বড় প্রাপ্তি। এখন জনে জনে সবাইকে তো সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব না। শরিকদের যার যার অবস্থান থেকে কথা বলতেই পারেন। তিনি বলেন, আসলে সত্যিকারভাবে আমরা যারা যুক্তফ্রন্ট করি, তারা নিরুৎসাহিত ছিলাম। কারণ মাত্র দুটি আসন পেয়েছি। তারপর তো উপজেলা নির্বাচন হল। এখন আমরা সক্রিয় হচ্ছি। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে সক্রিয় হওয়ার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষক ইস্যুতে আমরা শিগগিরই মাঠে নামব।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু নির্বাচনের পর থেকে জোটটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই জোটকে চাঙ্গা করতে শুক্রবার রাজধানীর ট্রপিক্যাল মোল্লা টাওয়ারে যুক্তফ্রন্টের বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

সূত্র জানায়, সভায় যুক্তফ্রন্টের শরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তফ্রন্টের মূল্যায়ন যেমন পরিষ্কার নয়, উপজেলা নির্বাচন নিয়েও আমরা অন্ধকারে ছিলাম। যুক্তফ্রন্টের রাজনীতি আসলে কী? উদ্দেশ্যই বা কী? জাতীয় নির্বাচনের পর কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়াসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে অন্যান্য রাজনৈতিক জোট কর্মসূচি পালন করলেও যুক্তফ্রন্ট করেনি। সভায় জোটের অন্যতম শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার জন্যই আমাদের রাজনীতি। আমরা কি তা করতে পারছি? না পারলে এই ফ্রন্টের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। রাজনীতির প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। নৌকা মার্কায় দু’জন এমপি বানালেই ফ্রন্টের রাজনীতি শেষ হয়ে যায় না।

সভায় যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীও বলেন, জাতীয় সংসদে যুক্তফ্রন্টের যে দুই সদস্য আছেন, তাদের ভূমিকা আসলে কী? কৃষক ধানের মূল্য পাচ্ছে না, পবিত্র রমজানের সময় পাট শ্রমিকরা মজুরির দাবিতে রাজপথে অবস্থান নিয়েছিল; সে সময় ওই দুই সংসদ সদস্য কী ভূমিকা রেখেছেন? তারা কোনো ধরনের ভূমিকা আদৌ নিয়েছেন কি না, জাতি তো জানেই না। এমনকি আমরাও জানি না। শমসের মবিন আরও বলেন, রাজনীতি জনগণের জন্য। সুতরাং জনগণের পক্ষে রাজনীতি করতে না পারলে জনগণ কোনোদিন ক্ষমা করবে না।

যুক্তফ্রন্টের শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের আগে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য বি চৌধুরীকে ছেড়ে চলে যায়। তিনি তখন একেবারেই রাজনীতি-শূন্য হতে চলছিলেন। তার সেই দুঃসময়ে আমরা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে ৩টি দল যুক্তফ্রন্টে যোগ দিই। কিন্তু ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা বি চৌধুরীর আহ্বানে যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলাম, নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে ফ্রন্টের কর্মকাণ্ডে তা পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচনের আগে সরকারি দলের সঙ্গে সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে জোট শরিকদের আসন ভাগাভাগির আশ্বাস দেয়া হলেও কার্যত তিনি তা করেননি বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। শুধু নিজ দল বিকল্পধারার দুই নেতার আসন নিশ্চিত করা ছাড়া সরকারি দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান শরিকদের জন্য ন্যূনতম দরকষাকষি করেননি।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহি বি চৌধুরীর নির্বাচনী প্রতীক আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিশ্চিত করেই তিনি সন্তুষ্ট থেকেছেন। মূলত এসবসহ নানা বিষয় নিয়ে শরিকরা ক্ষুব্ধ।

যুক্তফ্রন্টের আরেক শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান হামদুল্লাহ আল মেহেদী যুগান্তরকে বলেন, এখন আমরা কি সরকারি দলে আছি না বিরোধী দলে- সে ব্যাপারে যুক্তফ্রন্টের শুক্রবারের সভায় একটা জিজ্ঞাসা ছিল। সরকারে থাকলে কীভাবে আছি আবার বিরোধী দলে থাকলে দেশে বিভিন্ন যে অনিয়ম হচ্ছে সে ব্যাপারে বিবৃতি বা কোনো কর্মসূচি পালন করিনি কেন? এসব বিষয় সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *