প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে মূলধনী যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়েছে। এতে টেক্সটাইল খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, নতুন বিনিয়োগ আসবে না। তাই শিল্পের স্বার্থে দেশীয় সুতাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, রফতানির বিপরীতে উৎসে কর পূর্বের ন্যায় দশমিক ২৫ শতাংশ এবং আগাম কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন এসব দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের সহ-সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ এবং সাবেক সহ-সভাপতি হোসেন মেহমুদ।
মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর বিদ্যমান ১ শতাংশ শুল্ককে প্রণোদনা উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে খোকন বলেন, বাজেটে টেক্সটাইল মেশিনারিজ, যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল ও উপকরণের ওপর ৫ শতাংশ আগাম কর আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এ আগাম করের কারণে শুল্কায়ন জটিলতায় আমদানিকৃত কাঁচামাল, উপকরণ, যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ বন্দরে পড়ে রয়েছে। এতে মিলগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ আগাম কর বিনিয়োগকে ব্যয়বহুল ও অলাভজনক করবে। ফলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্ত হবে।
আগাম করকে শিল্পের জন্য ‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এ অযৌক্তিক কর আদায়ের ফলে মিলগুলোকে অতিরিক্ত কর প্রদানে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে তাদের ‘ক্যাপিটাল ব্লক’ হতে থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় মিলগুলোতে তারল্য সংকট আরও তীব্র হবে। ফলে মেশিনারিজে দেয়া প্রজ্ঞাপন সুবিধা কোন সুফল বয়ে আনবে না। বরং তা পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করবে।
খোকন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলার মূল্যের দাম উঠানামা করে। পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত সুতা, কাপড় ও বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়ালের কারণে বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের স্পিনিং মিলগুলো উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০-৩০ সেন্ট কম মূল্যে সুতা বিক্রয় করে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ক্রমাগত লোকসানে পড়ে মিলগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। দেশীয় সুতায় ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করায় প্রতি কেজি সুতার দাম সর্বোচ্চ ২৪ টাকা ভ্যাট দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতিতে ভ্যাট আরোপের কারণে সুতার দাম আরও বাড়লে কোনো ফেব্রিক মিল বা তাঁতি স্থানীয় সুতা ক্রয়ে আগ্রহী হবেন না। কারণ বাজারে হাত বাড়ালেই শুল্কমুক্তভাবে বন্ড সুবিধায় আনা বিদেশি সুতা পাওয়া যায়। এর নেতিবাচক প্রভাবে স্পিনিং মিলগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা ব্যাংক, বীমা, পরিবহনসহ ও অন্যান্য অবকাঠামোগুলোকেও হুমকির সম্মুখীন করবে। ফলে বাংলাদেশ আবারও সুতা ও কাপড়ে আমদানি নির্ভর দেশে পরিণত হবে। তাই দেশীয় সুতাকে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা অথবা বর্তমানের ন্যায় প্রতি কেজিতে তিন টাকা ভ্যাট বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
রফতানিতে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বহাল রাখার আহ্বান জানিয়ে খোকন বলেন, রফতানি মূল্যের ওপর বিদ্যমান উৎসে কর হারটি অত্যন্ত উৎসাহজনক ও সহনীয়। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে নির্ধারিত রফতানি মূল্যের ওপর উৎসে আয়কর কর্তন সম্পর্কে কোনো কিছু উল্লেখ না থাকায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। রফতানিকে উৎসাহিত করতে উৎসে কর ০.২৫ শতাংশ বহাল রাখা প্রয়োজন।
টেক্সটাইল খাতের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে খোকন বলেন, বর্তমানে ২০০টির মতো স্পিনিং মিল রয়েছে। এ মিলগুলোতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার মতো বিনিয়োগসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬ লাখের বেশি মানুষ নির্ভরশীল। মিলগুলোর সিংহভাগ বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ থেকে টেক্সটাইল খাতে দেয়া পলিসি সাপোর্ট, প্রণোদনার কারণে স্থাপিত হয়েছে। তাই বর্তমানে টেক্সটাইল, স্পিনিংসহ এ খাতের অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি পরিপূরক শিল্প হিসেবে বিবেচিত। এমন পরিস্থিতিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সরকার তার দায় এড়িয়ে যেতে পারে না।
খোকন আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যের অনুচ্ছেদ ২১৭ বলেছেন, ‘লক্ষ্য রাখতে হবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে গিয়ে যেন দেশের বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’ বিটিএমএ মনে করে মূলধনী যন্ত্রপাতিতে আগাম করারোপ, রফতানিতে উৎসে কর বৃদ্ধি ও দেশীয় সুতায় ভ্যাট আরোপের প্রস্তাবগুলো তার বাজেট বক্তব্যের অনুচ্ছেদ ২১৭-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।