নগরীতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ অভিযান চলছে


সিলেট নগরীকে দুই ভাগ করে মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। নগরীতে এই নদীর দুই তীর দখল করে গড়ে ওঠেছে পাঁচশতাধিক স্থাপনা। নগরীর মাছিমপুর থেকে শেখঘাট শাহজালাল গেট পর্যন্ত এলাকায় পাঁচশতাধিক স্থাপনা চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন।

নদীর তীর দখল করে এসব স্থাপনার বেশিরভাগই গড়ে তুলেছেন স্থানীয় প্রভাবশালী। বহুতল ভবনও গড়ে তুলেছেন কেউ কেউ। এতোদিন নদী দখল করে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কেউ। ফলে বহাল তবিয়তেই ছিলো স্থাপনাগুলো।

তবে এবার আদালতের নির্দেশে নদীর তীর দখলমুক্ত করতে যৌথ অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, সিলেট মহানগর পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই অভিযানে গত দু’দিনে উচ্ছেদ করা হয়েছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। সুরমা নদীর তীরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর বাইরেও উপজেলাগুলোতে নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদেও অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

অভিযানের প্রথম দিন রোববার (৭ জুলাই) সকাল থেকে নগরের কাজিরবাজার খেয়াঘাট ও মাছবাজার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ও দোকানপাট উচ্ছেদে করা হয়। সোমবার  (৮ জুলাই) ক্বিন ব্রিজ থেকে কাজিরবাজার সেতু পর্যন্ত উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই দুই দিনে সুরমা নদীর পাড়ের শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়,  গত ১৩ মে নদীকে দখলমুক্ত করা্র নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। এতে সুরমা নদীর উভয় পাশের সকল অবৈধ দখলদার, স্থাপনাসহ সিলেট জেলার সকল নদী, চড়া, খাল, জলাধার ও সরকারী ভূমির উপর অবৈধ স্থাপনা সরানোর নির্দেশ দেন আদালত। এছাড়া ২ মাসের মধ্যে দৃশ্যমান কিছু করে এ নিয়ে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ারও নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সুরমার তীর দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ১৫দিন আগে জেলা প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে নদীর তীরবর্তী এলাকায় একটি জরিপ করা হয়। সেই জরিপে উঠে আসে নদীর তীর দখলদারদের চিত্র।

এই উচ্ছেদ অভিযানের আগে নদীর তীর থেকে স্থাপনা সরানো জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। এতে দখলদাররা সাড়া না দেওয়ায় এবার অবৈধ স্থাপনাগুলি গুড়িয়ে দিতে অভিযান শুরু হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলমান এ অভিযানে যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। এতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ সিলেট মহানগর পুলিশ। পানি উন্নয়ন বোর্ডও এ অভিযানে সহযোগিতা করছে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খৃস্টফার হিমেল রিছিল বলেন, নদীর তীরবর্তী এলাকায় যারা অবৈধ স্থাপনা করেছেন, দখল করেছেন তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান। আমরা হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এই অভিযান পরিচালনা করছি। এই অভিযানের আগে মাইকিং করে নদীর তীর দখলমুক্ত করা জন্য আহবান জানানো হয়েছে। বৈধ ও অবৈধ জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। দখলদারদের সর্তক করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু দখলধারার কিছুই মানছেন না তাই আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সিলেট নগরের নদীর তীর দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনাগুলো আমরা উচ্ছেদ করছি। পরবর্তীতে জেলার অন্যান্য স্থানেও নদীর তীর দখলমুক্ত করা হবে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। এর আগে সুরমা নদীর তীরের দখলকৃত কিছু অংশের তালিকা আমরা (সিসিক) করেছিলাম। এখন সেই তালিকায় আরও অবৈধ স্থাপনা ও দখলদার যোগ হয়েছেন। অবৈধ স্থাপনা ও দখলদারদের জন্য যে তালিকা করা হচ্ছে তার জরিপ এখনো চলমান আছে। এই উচ্ছেদ অভিযানও চলমান থাকবে। সুরমা নদীর দুই তীর যতদিন পর্যন্ত দখলমুক্ত না হবে ততদিন পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন,  সুরমা নদীর তীর দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসন, সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট মহানগর পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়ে একটি উচ্ছেদ অভিযান চলছে। মূলত এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন ও সিসিকের নেতৃবৃন্দ। আমরা সহযোগী হিসেবে আছি।

তবে অচিরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেতৃত্বে সিলেটের নদীর তীরবর্তী দখলদারদের বিরুদ্ধে আরেকটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। কারণ নদী ও নদীর তীর দখলমুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *