বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে ইনাম আহমেদ চৌধুরীর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদে ঠাঁই পাওয়া মেনে নিতে পারছে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন।
অবিলম্বে তার এই পদ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠনটি।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, “দুঃসময়ের ত্যাগী দীর্ঘ পরীক্ষিত নেতাদের প্রত্যাখ্যান করে মান্যবর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কীভাবে সদ্য দলে যোগ দেওয়া ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে উপদেষ্টা করেছেন, তা আমাদের বিস্মিত করেছে।”
ইনাম আহমেদ চৌধুরীর কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, “১৯৬০ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করার পরে বাংলাদেশের জীবনে সংঘটিত সকল রাজনৈতিক পট পরিবর্তন যেমন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের কালো অধ্যায় ও জেনারেল এরশাদের শাসনামলে- সবখানেই তিনি আমলাতন্ত্রে পাকিস্তান কিংবা পাকিস্তানি চেতনার একনিষ্ট সেবক হিসেবে কাজ করেছেন। “চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করার পরে বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ গ্রহণ করে সেই সেবাদানে ষোলকলা পূর্ণ করেন। যে কয়জন আমলা জেনারেল জিয়ার বিএনপি প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে কারিগর ছিলেন ইনাম আহমেদ চৌধুরী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলে পাক-চীনপন্থি কূটনীতিক-রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জামায়াতে ইসলামীকে চারদলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা পরবর্তীকালে ২০ দলীয় জোটে সম্প্রসারিত হয়। ২০০১ সালে লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠানের নেপথ্যে নায়কও তিনি। “এর ফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, বিএনপির শাসনামল ২০০১-২০০৬ সময়কালে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যে সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অবতারণা হয় যেমন- প্রতিবেশী দেশকে অশান্ত করতে উলফার নিকট ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালানের পরিকল্পণা প্রণয়ন, আওয়ামী লীগের টপ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ড, ৫১৭ জায়গায় একসাথে বোমা হামলাসহ দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্ট সকল সন্ত্রাসী কার্যকলাপে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন থাকার সম্ভাবনা আছে।
“ফলে তার ঠিকানা হওয়ার কথা কারাগারে ফাঁসির দড়িতে, কিন্তু তার জায়গা হল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীতে, যা বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে এক ভয়াবহ দুর্যোগের পূর্বাভাস।”
অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, “ইনাম আহমেদ চৌধুরীর লিখিত গ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায় মুদ্রিত আছে আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সীমাহীন অমর্যাদা আর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে খাটো করার অদম্য প্রয়াস। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী আর স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করা জেনারেল জিয়ার আদর্শের উত্তরাধিকারী। আওয়ামী লীগে যোগদান করলেও কোনো বিচারেই তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হতে পারেন না।”
তিনি বলেন, “যে লোকের উপদেশ শুনে বিএনপি এক সর্বহারা নিঃস্ব দলে পরিণত হয়েছে, খালেদা জিয়া বরণ করেছেন কারাগার, তদীয় নেতা তারেক রহমান আছেন নির্বাসনে, সেই নেতা আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে বা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে কি উপদেশ দেবেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন প্রমুখ।