কমলগঞ্জে এখনও ত্রাণ পাননি পানিবন্দি শতাধিক পরিবার


পাঁচ দিন পর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার এলাকায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে হতদরিদ্র পানিবন্দি শত শত পরিবারের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ পৌঁছায়নি। শুকনো খাবার না থাকায় অনেক পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ত্রাণ না পাওয়া অভিযোগের পাশাপাশি অনেকেই না খেয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান।

নদী ভাঙ্গন ও পাহাড়ি ঢলে গত শুক্রবার রাত থেকে পানিবন্দি রয়েছেন এসব পরিবার।  পানিবন্দি মানুষের জন্য ৫২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত তা বিতরণ করা হয়নি। বুধবার থেকে সেগুলো বিতরণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার পতনঊষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, নন্দ্রগ্রাম, কোনাগাঁও, নিজ বৃন্দাবনপুর, গোপীনগর, রাধাগোবিন্দপুর, মাজগাঁও, বাজারকোণা, কোনাগাঁও, পশ্চিম পতনঊষার, ফরিংগাকোণা প্রভৃতি গ্রামে এখনো মানুষের বসতবাড়িতে পানি রয়েছে। এলাকার বাসিন্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায় এখন পর্যন্ত কোন সরকারি ত্রাণ সহায়তা আসেনি এসব এলাকায়।

পতনঊষারের কৃষক তোয়াবুর রহমান বলেন, আমরা ত্রাণ চাই না। বীজ, হালির চারাসহ জরুরী ভিত্তিতে কৃষি পুনর্বাসন চাই।

বাজারকোণা গ্রামের রিকশাচালক ও হোসেন মিয়া বলেন, গত ৫দিন ধরে এ গ্রামের ৩৫টি পরিবার পানিবন্দি। ঘরের চুলা পর্যন্ত জ্বলছে না। এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ আসেনি।

পতনঊষার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড সদস্য আ. কুদ্দুস জানান, তার ওয়ার্ডে ৬টি গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার এখনো পানিবন্দি। অনেক লোক বসতঘর ছেড়ে গরু-ছাগল, মালামালসহ বাহিরে আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এছাড়া উপজেলার শমশেরনগর, পতনউষার, মুন্সীবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকার প্রায় ৩৫টি গ্রামের সাত শ’ পরিবার গত চারদিন ধরে বন্যার পানি মোকাবেলা করে দিন কাটছেন। চারদিনেও সরকারি কোন ধরণের ত্রাণ না আসায় হত দরিদ্র পরিবার সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ গবাদি পশু নিয়েও একই ঘরে দিন যাপন করছেন। এসব পরিবার সদস্যদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা গেছে।

মঙ্গলবার ( ১৬ জুলাই) শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ নিজের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ২শ’ পরিবারের মধ্যে ৫ কেজি চাল, হাফ লিটার সোয়াবিন, এক কেজি পিয়াজ, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিরা ও ১ কেজি আলু বিতরণ করেন। তবে পার্শ্ববর্তী পতনঊষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নে মঙ্গলবার পর্যন্ত কোন ত্রাণ বা শুকনো খাবার দিতে দেখা যায়নি।

পতনঊষার ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান নারায়ন মল্লিক বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে নিজ তহবিল থেকে ২০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। পানির জন্য অনেক স্থানে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে পতনঊষার ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ মে.টন চাউল বুধবার থেকে বিতরণ করা হবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এ পর্যন্ত ৫২ মে.টন চাল ৭টি ইউনিয়ন ও কমলগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে বরাদ্দ করা হয়েছে। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ এক লাখ টাকা বরাদ্দ করা হবে। আরও ১০ মে.টন চাল পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *