ভূমি অফিসের দুর্নীতি


সম্পদের হিসাব দেন নি ভূমি অফিসের কর্মচারীরা। দুর্নীতিরোধে ভূমি বিভাগের চাকুরীজীবীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে সরকার। জেলা প্রশাসক বরাবরে এই হিসাব জমা দেয়ার শেষ সময় ছিলো ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছে সরকার। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ১৯টি জেলায় কর্মরত কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছে। কিন্তু বাকি ৪২টি জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা তাদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়নি নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে। এই সংক্রান্ত খবর সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।

ভারপ্রাপ্ত ভূমি সচিব বলেন, যেসব জেলার কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব পাওয়া যায়নি এসব জেলার ডিসিদের বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নিতে। তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ভূমি সেবা সপ্তাহ এবং ভূমি উন্নয়ন কর মেলার আয়োজন করা হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি-লুটপাট হচ্ছে ঢালাওভাবে। সরকারি দপ্তরে ঘুষ দুর্নীতির মহোৎসব চলছে এমন শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে যে দপ্তরগুলোর নাম ওঠে আসবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভূমি অফিস। ভূমি সংক্রান্ত সব দপ্তরেই চলছে ঘুষ বাণিজ্য; চলছে সাধারণ মানুষদের পকেট কাটা।

হয়রানি করা হচ্ছে মানুষদের। ঘুষ ছাড়া ভূমি সংক্রান্ত কোন কাজ সম্পাদন করা রীতিমতো দুঃস্বপ্নের বিষয়। ভূমি রেজিস্ট্রি, নামজারি, রেকর্ড সংশোধন, কর প্রদান ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই মানুষকে হয়রানীর শিকার হতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের কয়েকগুণ বেশি অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হয় ভূমি মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা। আর এতে ভূমি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেট ভারী হচ্ছে দিনের পর দিন। তারা গড়ে তুলছে সম্পদের পাহাড়। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বাড়িগাড়িসহ বিপুল বিত্ত গড়ে ওঠেছে। যারা একটু উচ্চ পদে রয়েছে তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য। শুধু ভূমি বিভাগ নয়, অন্যান্য সরকারি দপ্তরেও মোটামুটি একটি চাকুরি ভাগিয়ে নিলেই হলো; বছর কয়েকের মধ্যেই যে কেউ ‘বড় লোক’ বনে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সরকারও এই বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতির সুযোগ করে দিচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি চাকরীজীবীদের বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করায় ঘুষ দুর্নীতি কমেনি বরং এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এর কর্মকর্তাগণ দেশব্যাপী সফর করছেন; দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এমন মিষ্টি আহ্বানে কেউ সাড়া দেবে বলে মনে হয় না। কারণ, ‘চোরা নাহি শুনে ধর্মের কাহিনী’। যাদের রক্তে মাংসে মিশে গেছে দুর্নীতি, তাদের কাছে সব ধরনের নীতি বাক্যই অসার। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে দরকার ডাইরেক্ট একশন। সরকারি দপ্তরের উচ্চতর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নিম্নপদস্থ কর্মচারী ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা চাই ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *