ওসমানীনগরে ধর্ষণের মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ


সিলেটের ওসমানীনগর থানায় ধর্ষণ মামলা দিয়ে নিরীহ ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উপজেলার নগরীকাপন গ্রাম ও করণসী রোড এলাকাবাসী। অভিযোগে তারা বলেন, “স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এলাকার একটি নিরীহ পরিবারকে ধর্ষণের মতো একটি জঘন্য অভিযোগে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।” তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং ঘটনার মূল হোতাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবি জানান।

শনিবার (২৭ জুলাই) সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. নূর উদ্দিন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “গত ৯ জুলাই ওসমানীনগর থানা পুলিশ দিবাগত রাত ১টার দিকে মৃত মস্তাব আলীর স্ত্রী রানা বেগম, ভাই গোলাব আলী ও কুদ্দুছ আলীকে আটক করে। প্রতিবেশী হিসেবে আমরা আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জানান, একটি বিষয়ে থানায় গিয়ে সাক্ষী দিতে হবে। এরপর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তাদেরকে ছেড়ে না দিয়ে পরদিন একটি ধর্ষণ মামলার আসামি দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওসমানীনগর থানায় ৯ জুলাই দায়েরকৃত একটি ধর্ষণ মামলায় (নং-০৫) মস্তাব আলীর ছেলে মাসন মিয়া, স্ত্রী রানা বেগম, ভাই গোলাব আলী ও কুদ্দুছ আলীকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার খবর শুনে এলাকাবাসী বিস্মিত।”

তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণের ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর। আর স্থান উল্লেখ করা হয়েছে নগরীকাপন গ্রামে মৃত মস্তাব আলীর বসতঘর। অথচ ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে তারা গোয়ালাবাজারস্থ আহমদ প্যালেসে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। ঘটনার ভিকটিমও গত দুই বছরের মধ্যে কখনো তাদের বাড়িতে আসেনি।”

তাদের অভিযোগ, “প্রায় ২০ দিন আগে মামলার বাদী ঝুনু মিয়া ভিকটিমকে নিয়ে গোয়ালাবাজারস্থ জনৈক ডাক্তারের চেম্বারে যান। আত্মীয়তার সূত্রে ঝুনু মিয়া ও তার স্ত্রী হেনা বেগম তাদের মেয়েকে দেখতে যেতে মোবাইল ফোনে রানা বেগমকে অনুরোধ করেন। তারা তাদের মেয়ের জঠিল রোগ হয়েছে এ কথা বলে রানা বেগমের কাছে কান্নাকাটি করেন। তাদের কান্নাকাটির কারণে রানা বেগম ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। এ সময় ঝুনু মিয়া তার মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন তার কাছে। ঝুনু মিয়ার স্ত্রী হেনা বেগমের কাছ থেকে জানতে পারেন তাদের মেয়ে অন্ত:সত্ত্বা। তখন রানা বেগম পিতৃ পরিচয় জানতে চাইলে হেনা বেগম বলেন, তার স্বামীর ভাতিজা এ ঘটনার সাথে জড়িত। মেয়েকে বাঁচাতে এক লক্ষ টাকা ব্যবস্থা করে দিতে রানা বেগমকে অনুরোধ করেন হেনা বেগম। রানা বেগম এর উত্তরে বলেন, তিনি এত টাকা দিতে অক্ষম। কারণ তার একমাত্র ছেলে মাসন মিয়া টমটম চালিয়ে যা আয় করে তা দিয়ে কোনো মতে তাদের সংসার চলছে। টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় বড় অঙ্কের টাকা আদায়ের হীন উদ্দেশ্যে ঝুনু মিয়া বাদী হয়ে রানা বেগমসহ তার ছেলে ও দুই দেবরকে আসামি করে ওসমানীনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন।”

সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে বলেন, “মেডিকেল টেস্টের মাধ্যমে ঘটনার মূল হোতাকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক।” একই সঙ্গে নিরীহ ও নিরপরাধ লোকদেরকে অপবাদ এবং হয়রানি থেকে মুক্তির দাবি জানান তারা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন আয়না মিয়া, চান্দ আলী, লোকমান আলী, ময়না মিয়া, শামীম মিয়া, শাহনুর, লঠই মিয়া, সাজনা বেগম, সুফিয়া বেগম, সমছ মিয়া প্রমুখ।