এক বছরে কতটা সফল মেয়র আরিফ


ঠিক একবছর আগে ২য় মেয়াদে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনের আগে নগরীর উন্নয়নে দিয়েছিলেন নানা প্রতিশ্রুতি। এই এক বছরে কতোটা সফল হয়েছেন আরিফুল হক? নিজের প্রতিশ্রুতি কতোটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন মেয়র?

প্রথম দফায় মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়াদকালের একটা বড় সময়ই ছিলেন কারাগারে। গত নির্বাচনের আগে সেই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছিলেন, কারাগারে থাকায় যে প্রতিশ্রুতিগুলো পালন করতে পারেননি তা এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করবেন। এবার নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশাও অধিক।

একবছরে নগরজুড়ে কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে নগরবাসীর কাছে প্রশংসিত হচ্ছেন আরিফুল হক। আবার বর্ষা মৌসুমে উন্নয়নের নামে নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে খুঁড়াখোঁড়ি করে দুর্ভোগ সৃষ্টি করায় সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে তাঁকে।

গত বছরের ৩০ জুলাই সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সিলেট ছাড়া বাকি দুটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হন। কেবল সিলেটে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জয় পান।

নির্বাচনের আগে আরিফুল তাঁর ইশতেহারে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে তরুণদের নিয়ে ‘ড্রিমটিম’ গঠন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এসব তরুণের সমন্বয়ে প্রযুক্তিনির্ভর সিলেট গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘আগামীর সিলেট’। এতে ফুটপাত দখলমুক্ত করা ও সম্প্রসারণ, হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট চালু, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু, জলাবদ্ধতামুক্ত নগর, বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হওয়ার মাসখানেক পর গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর আরিফুল শপথ নিয়ে পুণরায় মেয়রের পদে বসেন।

নাগরিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েও আরিফুল হক নগরের উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে চলেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে মেয়রকে অসহযোগিতার মনোভাব পরিলিক্ষত হয়েছে বলেও মন্তব্য অনেকের।

কয়েকজন নাগরিক জানিয়েছেন, আরিফুল হক চৌধুরী প্রায় ১১ মাস আগে দ্বিতীয় দফায় দায়িত্ব নিয়েছেন। খুব বেশি সময় অতিবাহিত না হওয়ায় এখনো তাঁর কাজের প্রকৃত মূল্যায়ন করার সময় আসেনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জলাবদ্ধতা তিনি অনেকটাই নিরসন করতে পেরেছেন। তবে তরুণদের নিয়ে ‘ড্রিমটিম’ গঠন এবং হকারদের জন্য হলিডে মার্কেট চালুর উদ্যোগ তিনি এখন পর্যন্ত নিতে পারেননি। ফুটপাত উচ্ছেদে মাঝেমধ্যে ভূমিকা রাখলেও প্রথম দফার মতো এখনো সেটা সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি। এ ছাড়া এখনো নগরে বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়ে গেছে।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল দপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শ কোটির টাকার কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এসব উন্নয়নকাজই মেয়রের ‘আগামীর সিলেট’ পরিকল্পনার প্রথম ধাপের কাজ। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা ও নর্দমা সম্প্রসারণ, ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন এবং ইন্টারনেট-ডিশের কেব্ল সংযোগ স্থাপন, ছড়া-খাল দখলমুক্ত করার পাশাপাশি খনন ও সম্প্রসারণ করার কাজ। তবে নগরবাসীর অভিযোগ, এসব উন্নয়নকাজ খুবই ধীরগতিতে চলছে। এতে নাগরিক দুর্ভোগ বাড়ছে। এ ছাড়া একেকটি এলাকায় একাধিক উন্নয়নকাজ শুরু করা অপরিকল্পিত পরিকল্পনার অংশ বলেই তাঁরা মনে করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের জিন্দাবাজার, বারুতখানা, জেলরোড, মীরাবাজার, সোনারপাড়া, পাঠানটুলা, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, মীরের ময়দান এলাকায় রাস্তার পাশ খোঁড়াখুঁড়ি করে নর্দমা সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এতে করে রাস্তাগুলো সরু হয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। বিশেষত জিন্দাবাজার এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ, নর্দমা সম্প্রসারণ এবং ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন এবং ইন্টারনেট-ডিশের কেবল সংযোগ স্থাপনের কাজ একসঙ্গে চলায় নগরবাসী দুর্ভোগে পড়ছেন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডজুড়ে পুরোদমে উন্নয়নকাজ চলছে। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এখনো চলমান। তবে এসব কাজের সুফল এরই মধ্যে নগরবাসী পেতে শুরু করেছেন। প্রায় দেড় শ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলছে, অবশ্য এসব নির্মাণকাজের মেয়াদকাল এখনো শেষ হয়নি। তাই ধীরগতিতে কাজ চলছে, এমনটি খুব একটা বলা যাবে না।

এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমি কতটুকু সফল হয়েছি তা নগরবাসীই বিবেচনা করবেন। আমার দায়িত্ব কাজ করে যাওয়া। সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নের ভার নগরবাসীর।